Haji Biryani Puran Dhaka, আজ আমি আপনাদের জন্য নিয়ে আসেছি পুরান ঢাকার খুবই ইস্পেসাল একটি ডিস। এটার নাম হচ্ছে হাজী বিরিয়ানি। এটা নামে বিরিয়ানি হলেও এটার রান্নার স্টাইল এবং এটার স্বাদ তেহারির সাতে অনেকটাই মিল’ এই টাইপের দোকানের যে এস্পেসাল ডিস গুলো আছে এগুলর রেসিপি আসলে সিক্রেট থাকলেও নিজের রান্নার এক্সপেরিয়েন্স প্লাস নিজে খাওয়ার যে স্বাদ সেই সবকিছু মিলিয়েই কিন্তু মোটামুটি এটার আশেপাশের একটা রেসিপি দাড় করানো যায়।
হুবহু সেম রেসিপি না হলেও প্রায় ৯৫% পার্সেন্ট থেকে ৯৬% পার্সেন্ট মিলে যায়। আজকের এই রেসিপিটি আপনাদের সাথে আমি শেয়ার করব।
এই মশলাটা তৈরি করতে যে উপকরণ গুলো লাগবে
শুরুতেই একটা মসলা তৈরি করে নেবেন। এর জন্য দুই ইঞ্চি সমান লম্বা দারুচিনি নেবেন। এবং একটা জায়ফলের অর্ধেকটা নেবেন। এক চা চামচ সাদা গোলমরিচ। আপনারা চাইলে কালো গোলমরিচ ও নিতে পারেন। দুই টুকরো জয়ত্রী সেই সাথে ছয় থেকে সাতটা লং আর সাত থেকে আটটা এলাচ নেবেন।
এই সবকিছু কে একত্রে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। একেবারে মিহি করে। এই মশলা গুলোকে ভাজতে হবে না। ভাজা ছাড়াই কিন্তু ব্লেন্ড করে নিতে হবে। আপনারা চাইলে পাটায় পিসে নিতে পারেন।
এবার একটা হাঁড়িতে হাফ কাপ পরিমাণ সোয়াবিন তেল এবং হাফ কাপ পরিমাণ সরিষার তেল দিয়ে এর মধ্যে দুইটি তেজপাতা হাত দিয়ে ছিড়ে দিতে হবে। এর মধ্যে হাফ কাপ পরিমাণ পেঁয়াজ বাটা আর দুই টেবিল চামচ পরিমাণ আদা বাটা দিতে হবে। সেই সাথে দিতে হবে দেড় টেবিল চামচ পরিমাণ রসুন বাটা।
এবার সবকিছু কে একত্রে করে কষিয়ে নিতে হবে চার থেকে পাঁচ মিনিট কষানোর পর এর মধ্যে দিয়ে দিতে হবে এক কেজি পরিমাণ মাংস। মাংসটা আগে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। তারপর ধুয়ে নিতে হবে আর এ মাংস তে সামান্য পরিমাণ চর্বি ও হাড় থাকবে। মাংসের টুকরোগুলো দেখে বুঝতে পারবেন যে কত ছোট মাংসগুলো রান্না করলে আরো ছোট হয়ে যাবে।
এবার এর মধ্যে এক চা চামচ মরিচের গুঁড়া, এক চা চামচ বিরিয়ানির মসলার গুঁড়া আর এক চা চামচ জিরার গুড়া দিয়ে দিতে হবে।
Haji Biryani Puran Dhaka
এবার যে মসলাগুলো কে গুঁড়ো করে রেখেছেন সেই পুরো মসলা টায় সবকিছু মিশিয়ে এর মধ্যে স্বাদমতো লবণ দিয়ে আবার একটু মিশিয়ে নিতে হবে। চুলার আচটা মিডিয়াম রেখে তারপর মাংস টাকে ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ কষানোর পর দেখবেন যে মাংস থেকে পানি বের হচ্ছে। আপনার পানিটা দেখে বুঝতে পারবেন যে কত বেশি পানি বের হয়।
আর কোনো এক্সট্রা পানি দেবেন না। মাংস থেকে যে পানি বের হবে সে পানির ভেতরে মাংসগুলোকে পুরোপুরি সেদ্ধ করে নিতে হবে। যদি মনে হয় যে আপনার মাংস থেকে এনাফ পানি বের হয়নি সে ক্ষেত্রে আর একটু পানি অ্যাড করে মাংসগুলোকে পুরোপুরি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে সেদ্ধ করে নেবেন। মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে দেখবেন যে একেবারে ভুনা ভুনা হয়ে গেছে আর ভুনা না হলে ঢাকনাটা তুলে দিয়ে মাংস টাকে আরেকটু নেড়ে ভুনা ভুনা করে নেবেন। দেখবেন তেল গুলো সুন্দর করে ভেসে উঠেছে। এবার চুলা টাকে বন্ধ করে দেবেন। এবার একটা চামচের সাহায্যে শুধু মাংসগুলোকে হাড়ি থেকে তুলে নেবেন।
এবার সে তেলের যে তেলটুকু অবশিষ্ট হাঁড়িতে রয়ে গেছে এটাকে একটু গরম করে এর মধ্যে বিরিয়ানির চাল টাকে রান্না করে নিতে হবে। আপনারা আপনাদের ইচ্ছে মত চাল ব্যবহার করবেন যেমন আপনারা চাইলে চিনি গুড়া পোলাওয়ের চাল, কালোজিরা পোলাওয়ের চাল ও ব্যবহার করতে পারেন যেকোনো সুগন্ধি চাল দিয়ে এটা তৈরি করা যাবে। তবে বাসমতি চাল দিয়ে আসলে তেমন একটা ভালো হবে না রেজাল্ট।
এবার চুলার আচ টাকে মাঝারি রেখে চালটা কে ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে। যখন ভাজা হয়ে যাবে। সেটা বোঝার উপায় হচ্ছে শোন শোন শব্দ শুনতে পাবেন। সেইসাথে চালের রংটা বদলে একটু সাদাটে হয়ে যাবে। তখন আর ভাজতে হবে না এর মধ্যে দিয়ে দেবেন পরিমাণমতো গরম পানি। আপনি যে পরিমাণ চাল মেপে দিয়েছেন ঠিক সে পরিমাণ ডাবল পানি মেপে দেবেন, আপনি যদি তিন কাপ চাল মেপে দিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে ছই কাপ পরিমাণ পানি দিতে হবে।
এবার এর মধ্যে স্বাদমতো লবণ দেবেন লবণের পরিমাণটা একটু বুঝেশুনে দেবেন কারণ মাংস রান্না করার সময় মাংস তে লবণ দিয়েছেন তাই একটু বুঝেশুনে স্বাদমতো লবণ দেবেন। বেশ কিছুক্ষণ পর যখন দেখবেন যে বলক উঠছে, পানি টাও টেনে গেছে, আর চালটা দেখা যাচ্ছে সেই পর্যায়ে দিয়ে দিতে হবে উঠিয়ে রাখা মাংসগুলো।
এবার প্রায় দশ থেকে পনেরোটা কাঁচা মরিচ দিয়ে দেবেন বা পরিমাণ মতো কাঁচা মরিচ দেবেন ভাবছেন এতগুলা কাঁচা মরিচ দিলে ঝাল হয়ে যাবে। না ঝাল হবে না এ কাঁচা মরিচ শুধু বোটা ফেলে দিয়ে দেবেন মরিচটা দিলে ঝাল হবে না সুন্দর একটি ফ্লেভার নিয়ে আসবে বিরিয়ানিতে। এই বিরিয়ানির ফ্লেভারটা কিন্তু কাঁচা মরিচের উপর ডিপেন্ড করে।
তাই কাঁচা মরিচ টাকে কিন্তু অবশ্যই একটু বেশি দিতে হবে। তবে কোনভাবেই ফেড়ে দেওয়া যাবেনা আর যদি কোনভাবে ভুল করে হলেও ফেড়ে দিয়ে দেন কাঁচা মরিচ তাহলে বিরিয়ানি অনেক ঝাল হয়ে যাবে।
Haji Biryani Puran Dhaka
এবার চুলার আচটাকে একেবারেই লোতে রেখে দিয়ে তারপর একটা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ঢাকনাই কোন ছিদ্র থাকলে সেটাকে যে কোন কিছু দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। এবার ঠিক পনেরো মিনিটের জন্য এই হাড়িটাকে দমে রেখে দিতে হবে এই পনেরো মিনিট চুলার আচ বাড়ানো যাবেনা ঢাকনাও খোলা যাবেনা।
ঠিক পনেরো মিনিট পরে বিরিয়ানি গুলোকে একটু উল্টে পাল্টে নিচের পোলাও গুলো ওপরে আর উপরে পোলাও গুলো নিচে করে দিতে হবে।
এবারে এর মধ্যে প্রায় হাফ চা চামচ পরিমাণ কেওড়া জল ছড়িয়ে দিতে হবে। এখন আবার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে অপেক্ষা করবেন পাঁচ থেকে সাত মিনিট এরই মাঝে বিরিয়ানি টা পুরোপুরি হয়ে যাবে।
এবার বিরিয়ানি টা পুরোপুরি হয় গেছে এবার বিরিয়ানি গুলো প্লেটে উঠিয়ে দেখতে পারেন কতটা ঝরঝরে হয়েছে। একটা কথা না বললেই নয় চালটা যখন দেবেন অবশ্যই কোন পাত্র দ্বারা মেপে দেবেন আর সে পাত্র দিয়ে ডাবল পানি মেপে দেবেন।
আশা করি আপনারাও এই স্পেশাল পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানি ট্রাই করবেন। অনেক টেস্টি অনেক সুস্বাদু একটি খাবার এটি একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করবে। আমি আপনাদেরকে গ্যারান্টি দিয়ে বলছি যে ভালো লাগবেই লাগবে।
আপনাদের কাছে ভালো লাগলে আমাকে প্লিজ কমেন্ট করে জানাবেন। কারণ আমি চেষ্টা করেছি সেই স্বাদটা অক্ষুন্ন রেখে তারপর রেসিপিটা প্রেজেন্ট করতে।